স্পোর্টস
ডেস্ক : কটকের ঘটনাকে ‘লজ্জা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ক্রিকেটের জীবন্ত
কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার। ক্রিকেটকে ভদ্রলোকের খেলা বলা হবে, কিন্তু
দর্শকদের আচরণ হবে অভদ্রের, সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ভারতের সাবেক
এই অধিনায়ক। কটকের ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বলারও সুযোগ খুব সীমিত। অতীতে
ক্রিকেট ইতিহাস দর্শকদের এমন উগ্র আচরণে কলঙ্কিত হয়েছে অনেকবারই। প্রিয়
দলের মাঠের পারফরম্যান্সে ক্ষুব্ধ হয়ে মাঠে বোতল, পাথর ইত্যাদি ছোড়া,
গ্যালারিতে চার-ছক্কার বোর্ডে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, খেলোয়াড়দের দিকে
খাদ্যসামগ্রীর উচ্ছিষ্ট বর্ষণ থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে
গালিগালাজ—অতীতে ক্রিকেট দেখেছে এমন অনেক ঘটনাই।
দর্শকদের উগ্র আচরণে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মতো আসরে খেলা পরিত্যক্তের ঘটনাও নিকট অতীতেরই। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে যে ব্যাপারটি সামনে চলে এসেছে তা হলো—এমন উচ্ছৃঙ্খল আচরণে ভারতীয় দর্শকদের বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ততা। ভারতের মাটিতে ব্যাপারটা মোটামুটি নিয়মিত বলেই কিনা কটকের ঘটনার পর ভারতীয় দলপতির অভিব্যক্তিতে প্রকাশ পেল এক ধরনের নির্লিপ্ততা। ‘ব্যাপার না’ বলেই তিনি হয়তো বোঝাতে চাইলেন ক্রিকেট মাঠে উচ্ছৃঙ্খল আচরণটা ভারতীয় দর্শকদের মজ্জাগতই।
দর্শকদের উগ্র আচরণে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মতো আসরে খেলা পরিত্যক্তের ঘটনাও নিকট অতীতেরই। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে যে ব্যাপারটি সামনে চলে এসেছে তা হলো—এমন উচ্ছৃঙ্খল আচরণে ভারতীয় দর্শকদের বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ততা। ভারতের মাটিতে ব্যাপারটা মোটামুটি নিয়মিত বলেই কিনা কটকের ঘটনার পর ভারতীয় দলপতির অভিব্যক্তিতে প্রকাশ পেল এক ধরনের নির্লিপ্ততা। ‘ব্যাপার না’ বলেই তিনি হয়তো বোঝাতে চাইলেন ক্রিকেট মাঠে উচ্ছৃঙ্খল আচরণটা ভারতীয় দর্শকদের মজ্জাগতই।
ব্যাপারটা ঠিক বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় না।
ক্রিকেট খেলাটিকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসার সুনাম যে দেশের দর্শকদের, তাঁরা
কীভাবে ‘উচ্ছৃঙ্খল’ হন? কিন্তু ক্রিকেট ইতিহাসে দর্শক হাঙ্গামার আখ্যানগুলো
বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সেখানে আসলেই ভারতীয় দর্শকেরা এগিয়ে। ভারতের
মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বারবারই বাধাগ্রস্ত হয়েছে দর্শকদের উগ্র আচরণে।
গত পাঁচ দশকে ভারতের মাটিতে এমন পাঁচটি বড় ঘটনা আছে (কটকের ঘটনা ছাড়াই),
যা ভারতীয় দর্শকদের শৃঙ্খলার ব্যাপারটি প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। এই
৫০ বছরে ভারতে যেখানে এতগুলো দর্শক-উচ্ছৃঙ্খলতার ঘটনা ঘটেছে, টেস্ট খেলা
বাকি দেশগুলোতে সেখানে দর্শক হাঙ্গামার ঘটনা নেই বললেই চলে।
১৯৬৭ সালে দর্শক হাঙ্গামায় কুরুক্ষেত্র কলকাতার ইডেন গার্ডেন।প্রিয় পাঠক, আসুন, একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক ভারতের মাটিতে দর্শক-হাঙ্গামার কয়েকটি কলঙ্কিত অধ্যায়ে…
ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইডেন টেস্ট, ১৯৬৭১৯৬৭ সালে দর্শক হাঙ্গামায় কুরুক্ষেত্র কলকাতার ইডেন গার্ডেন।প্রিয় পাঠক, আসুন, একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক ভারতের মাটিতে দর্শক-হাঙ্গামার কয়েকটি কলঙ্কিত অধ্যায়ে…
কলকাতার ইডেন গার্ডেন সেদিন কুরুক্ষেত্র হয়েছিল দর্শকদের অসহনশীল আচরণে। সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এগিয়ে ছিল ১-০ ব্যবধানে। কলকাতা টেস্ট জিতে ভারত সিরিজে ফিরবে—এমন প্রত্যাশা নিয়েই সেদিন মাঠে এসেছিলেন দর্শকেরা। ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৬৬ সালে শুরু হওয়া টেস্ট ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাট করছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পুরো দিন ব্যাট করে রোহান কানহাইয়ের অপরাজিত ৭৮ রানের সুবাদে ক্যারিবীয়রা প্রথম দিন শেষে তুলেছিল ৪ উইকেটে ২১২ রান। দ্বিতীয় দিন সকালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ধীরগতির ব্যাটিংয়ে ধৈর্য হারান দর্শকেরা। গ্যালারির শামিয়ানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ এই পরিস্থিতিতে গ্যালারিতে গিয়ে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে দেয়। দর্শকেরা মাঠে নেমে আসেন। ইডেনের সবুজ চত্বরেই শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ। পরিত্যক্ত হয়ে যায় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা।
ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া ব্র্যাবোর্ন টেস্ট, ১৯৬৯
বোম্বের (আজকের মুম্বাই) ব্র্যাবোর্ন স্টেডিয়ামে সেদিন দর্শকেরা ফুঁসে উঠেছিলেন ভারতীয় আম্পায়ার সাম্ভু পানের একটি সিদ্ধান্তে। এমনিতেই দলের অবস্থা খারাপ, তার ওপর এই সিদ্ধান্ত। শ্রীনিবাসন ভেঙ্কটারাঘবনের বিরুদ্ধে সাম্ভু পান কট বিহাইন্ডের সিদ্ধান্ত দিলে পাথর ছোঁড়া শুরু হয় গ্যালারি থেকে। দর্শকদের খেপিয়ে দিতে ভেঙ্কটারাঘবনের অভিব্যক্তিও সেদিন কম দায়ী ছিল না। তিনি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে নিজের ক্ষুব্ধতা সেদিন চেপে রাখতে পারেননি। দর্শকেরা মাঠে প্রবেশ করা শুরু করলে সেদিনকার মতো খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা ছাড়া উপায় ছিল না আয়োজকদের।মুম্বাইয়ের ব্র্যাবোর্ন স্টেডিয়ামে উগ্র দর্শকদের তাণ্ডব, ১৯৬৯
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল পণ্ড হয়েছিল কলকাতার ইডেনে।ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা, বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল, ইডেন, ১৯৯৬
এই ঘটনাও ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে আছে। প্রথমে ব্যাট করা শ্রীলঙ্কার ২৫২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ভারতের সংগ্রহ একপর্যায়ে ছিল ৯০/১। কিন্তু দলের সেরা ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার সাজঘরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ভারতীয় দল। ৯০/১ থেকে পরিণত হয় ১২০/৮-এ। কলকাতার দর্শকেরা প্রিয় দলের এমন পরিস্থিতি মেনে নিতে পারেননি। গ্যালারিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শুরু হয় তুমুল বোতল-বর্ষণ। এমন পরিস্থিতিতে খেলা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড। ম্যাচে জয়ী ঘোষণা করা হয় শ্রীলঙ্কাকে।
এই ঘটনাও ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে আছে। প্রথমে ব্যাট করা শ্রীলঙ্কার ২৫২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ভারতের সংগ্রহ একপর্যায়ে ছিল ৯০/১। কিন্তু দলের সেরা ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার সাজঘরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ভারতীয় দল। ৯০/১ থেকে পরিণত হয় ১২০/৮-এ। কলকাতার দর্শকেরা প্রিয় দলের এমন পরিস্থিতি মেনে নিতে পারেননি। গ্যালারিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শুরু হয় তুমুল বোতল-বর্ষণ। এমন পরিস্থিতিতে খেলা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড। ম্যাচে জয়ী ঘোষণা করা হয় শ্রীলঙ্কাকে।
ভারত বনাম পাকিস্তান, এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, ইডেন, ১৯৯৯হাঙ্গামার পর ১৯৯৯ সালে ইডেন গার্ডেন দর্শকশূন্য করছে পুলিশ।
ইডেনে সেদিন ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনার টেস্ট দেখতে উপস্থিত ছিলেন ৬৫ হাজার দর্শক। ম্যাচের তৃতীয় দিনে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ২৭৯ রান। একপর্যায়ে স্কোর তরতরিয়ে উঠে গেল ১৪৩/২-এ। গোল বাধে ঠিক তখনই। শচীন টেন্ডুলকার একটি বল রান নিতে গিয়ে বাধার ধাক্কা খান বোলার শোয়েব আকতারের সঙ্গে। পাকিস্তানের ফিল্ডার নাদিম খান এই সুযোগে ভারতের মাস্টার-ব্লাস্টারকে রানআউট করে দিলে ইডেনের দর্শকেরা মারমুখী হয়ে ওঠেন। টেন্ডুলকারের আউটের জন্য শোয়েব আকতারকে দায়ী করে তাঁর ওপর শুরু হয় বোতল ছোঁড়া। ক্রমশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকলে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) হস্তক্ষেপে পুরো স্টেডিয়াম দর্শকশূন্য করার অভিযান শুরু করে পুলিশ। ইডেনের বিশাল গ্যালারি দর্শকশূন্য করে সাড়ে তিন ঘণ্টা পর খেলা মাঠে গড়ালেও ঘটনাটি লজ্জায় ফেলেছিল ক্রিকেট-বোদ্ধা ও অনুরাগী সবাইকে।
২০০২ সালে জামশেদপুরের কিনান স্টেডিয়ামে বোতল-বৃষ্টি।ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ওয়ানডে ম্যাচ, জামশেদপুর, ২০০২ মোটামুটি ভালো সংগ্রহের পরেও ম্যাচটা সেদিন হেরেছিল ভারত। ক্যারিবীয়রা জয় থেকে মাত্র ১২ রান দূরে থাকতেই জামশেদপুরের কিনান স্টেডিয়ামে দর্শকেরা মাঠে বোতল ছোড়া শুরু করেন। তাঁদের ক্ষোভটা মূলত ছিল ভারতীয় বোলারদের ওপরই। বড় স্কোর করেও ম্যাচটা জিততে না পারার আফসোসের বহিঃপ্রকাশ তাঁরা ঘটান উগ্র আচরণে। এমন পরিস্থিতিতে জান বাঁচানোই আবশ্যক মনে হয়েছিল ম্যাচ রেফারির। তিনি ম্যাচ সেখানেই বন্ধ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন।
ইডেনে সেদিন ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনার টেস্ট দেখতে উপস্থিত ছিলেন ৬৫ হাজার দর্শক। ম্যাচের তৃতীয় দিনে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ২৭৯ রান। একপর্যায়ে স্কোর তরতরিয়ে উঠে গেল ১৪৩/২-এ। গোল বাধে ঠিক তখনই। শচীন টেন্ডুলকার একটি বল রান নিতে গিয়ে বাধার ধাক্কা খান বোলার শোয়েব আকতারের সঙ্গে। পাকিস্তানের ফিল্ডার নাদিম খান এই সুযোগে ভারতের মাস্টার-ব্লাস্টারকে রানআউট করে দিলে ইডেনের দর্শকেরা মারমুখী হয়ে ওঠেন। টেন্ডুলকারের আউটের জন্য শোয়েব আকতারকে দায়ী করে তাঁর ওপর শুরু হয় বোতল ছোঁড়া। ক্রমশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকলে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) হস্তক্ষেপে পুরো স্টেডিয়াম দর্শকশূন্য করার অভিযান শুরু করে পুলিশ। ইডেনের বিশাল গ্যালারি দর্শকশূন্য করে সাড়ে তিন ঘণ্টা পর খেলা মাঠে গড়ালেও ঘটনাটি লজ্জায় ফেলেছিল ক্রিকেট-বোদ্ধা ও অনুরাগী সবাইকে।
২০০২ সালে জামশেদপুরের কিনান স্টেডিয়ামে বোতল-বৃষ্টি।ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ওয়ানডে ম্যাচ, জামশেদপুর, ২০০২ মোটামুটি ভালো সংগ্রহের পরেও ম্যাচটা সেদিন হেরেছিল ভারত। ক্যারিবীয়রা জয় থেকে মাত্র ১২ রান দূরে থাকতেই জামশেদপুরের কিনান স্টেডিয়ামে দর্শকেরা মাঠে বোতল ছোড়া শুরু করেন। তাঁদের ক্ষোভটা মূলত ছিল ভারতীয় বোলারদের ওপরই। বড় স্কোর করেও ম্যাচটা জিততে না পারার আফসোসের বহিঃপ্রকাশ তাঁরা ঘটান উগ্র আচরণে। এমন পরিস্থিতিতে জান বাঁচানোই আবশ্যক মনে হয়েছিল ম্যাচ রেফারির। তিনি ম্যাচ সেখানেই বন্ধ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন।
No comments:
Post a Comment